ব্লাড ক্যান্সার কী — সংক্ষিপ্ত ও সহজ ভাষায়
হেমাটোলজি ক্যান্সার বা “ব্লাড ক্যান্সার” বলতে রক্ত তৈরি ও নিয়ন্ত্রণকারী সিস্টেমে হওয়া ক্যান্সার বোঝায়—মূলত অস্থি-মজ্জায় উৎপন্ন ক্ষতিগ্রস্ত (malignant) ব্লাড সেলগুলো। প্রধান তিনটি ধরন:
- লিউকেমিয়া — শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষতিগ্রস্ত বৃদ্ধি; ক্লান্তি, বারবার ইনফেকশন, রাতের ঘামের হামলা, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি।
- লিম্ফোমা — লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে টিউমার গঠন; গলার লিম্ফ-নোড, বগল বা বুকের নিচে গলানি দেখা যেতে পারে।
- মাল্টিপল মাইলোমা — প্লাজমা কোষ আক্রান্ত; ব্যথা, অ্যানিমিয়া ও প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া দেখা যায়।
(উপরের রোগ-বিবরণ সাধারনভাবে ব্যাখ্যা করা; ডিটেইলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।)
প্রতি পাঁচ মিনিটে এক নতুন আক্রান্ত — এই শিরোনাম মনে কাঁটা ঘেঁষে দেয়। ব্লাড ক্যান্সার (হেমাটোলজি ক্যান্সার) হলো এমন একটি রোগ যেখানে রক্ত বা অস্থি-মজ্জার কোষ আক্রমণ করে। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও মাইলোমা—এই তিনটির পরিচিতি, লক্ষণ ও চিকিৎসার অপশন নিয়ে নীচে বিশদভাবে জানানো হলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ: কীভাবে আপনি DKMS বা অনুরূপ রেজিস্ট্রিতে মাত্র একটি ফ্রি-সোয়াব কিট পূরণ করে স্টেম সেল-ডোনর হিসেবে নাম লিখিয়ে জীবন বাঁচাতে পারেন — পুরো প্রসেস ধাপে-ধাপে দেওয়া আছে।
পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান — কেন ভারতীয়দের রেজিস্ট্রি জরুরি?
- সামগ্রিক ক্যান্সার-বাই-নম্বর: সাম্প্রতিক গবেষণা ও রিজিস্ট্রিতে দেখা গেছে ভারতের ক্যান্সার বোজ বেড়েই চলেছে — 2022-এর অনুমান অনুসারে দেশের মোট ক্যান্সার-কেস ছিল ~14.6 লক্ষ; 2024-এর অনুমানোন্নত রিপোর্টও বেড়ন্ত সূচক দেখায়। PMC+1
- থ্যালাসেমিয়া (carrier prevalence): ভারতের অনেক সেন্টারে β-thalassaemia ক্যারিয়ার রেট ৩–৪%-এর রেঞ্জে রিপোর্ট হয়েছে—এর মানে লক্ষীর ধারেকাছে 30–45 মিলিয়ন ক্যারিয়ার থাকতে পারে। PMC
- স্টেম সেল রেজিস্ট্রি-গত বাস্তবতা: DKMS সহ বিশ্বস্ত ডোনার রেজিস্ট্রিগুলি বড় হলেও (DKMS-এর গ্লোবাল রেজিস্ট্রিতে 2024 শেষে ~12.5 মিলিয়ন নাম) ভারতীয় ডোনারদের অংশ ভাবে কম — ফলে ভারতীয় রোগীর জন্য matching donor পাওয়া কঠিন। dkms.org+1
এই প্রাসঙ্গিক সংখ্যাগুলি বোঝায় যে — ভারতীয় জেনেটিক/এথনিসিটি-ভিত্তিক ডোনার তালিকা বড় করা না হলে রোগীরা পারফেক্ট ম্যাচ পেতে বিদেশী রেজিস্ট্রি-র ওপর নির্ভরশীল থাকবে।
লক্ষণ: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা বা মাইলোমার কারণে সাধারণত যেগুলো দেখা যায় —
- অব্যাহতি ক্লান্তি, বারবার জ্বর বা ইনফেকশন
- রাতের অতিরিক্ত ঘাম ও অজানা ওজন কমা
- অনিয়মিত রক্ত ক্ষরণ, নীলচে ভাব বা জন্ডিস
- কাঁধ/পিঠ/হাড়ে তীব্র ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী লিম্ফ-নোড সোজা দেখা (বড় হওয়া)
যদি এই উপসর্গগুলো থাকে, দ্রুত ব্লাড টেস্ট ও হেমাটোলজিস্ট-এর পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা অপশন (সংক্ষিপ্ত)
- কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি।
- তবে বহু ক্ষেত্রে — বিশেষত কিছু লিউকেমিয়া/থ্যালাসেমিয়া কেসে স্টেম সেল (বোন ম্যারো) ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া স্থায়ী নিরাময় সম্ভব নয়। স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট হতে হলে অবশ্যই HLA-ম্যাচ (genetic match) প্রয়োজন।
(চিকিৎসা-পথ রোগের ধরন ও রোগীর অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে — চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত নিন।)
স্টেম সেল ডোনেশন: পুরো প্রক্রিয়া — ধাপে ধাপে
ধাপ ১ — রেজিস্ট্রেশন ও -সোয়াব কিট অর্ডার
- সাধারণত DKMS বা স্থানীয় রেজিস্ট্রি-ওয়েবসাইটে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন। কিট বাড়িতে পাঠানো হয় (ফ্রি)। dkms-india.org




ধাপ ২ — স্যাম্পল সংগ্রহ
- কিটে থাকা তুলোকাঠি দিয়ে গালের ভেতরের অংশ থেকে স্যাম্পল নেবেন, কিটে দেওয়া ফর্মে স্বাক্ষর করে প্যাক করে রিটার্ন করাবেন। প্রাথমিক HLA-টাইপিং এর জন্য এই DNA নমুনা ব্যবহৃত হয়। (কিট পাঠানোর পর ৪–৬ সপ্তাহে আপডেট আসে)। dkms.org
ধাপ ৩ — যদি ম্যাচ পাওয়া যায় —
- সম্ভাব্য ম্যাচ পেলে আপনাকে সংযুক্ত হসপিটাল/ক্লিনিকে ডাকা হয়; স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং হবে। যদি সব ঠিক থাকে, দানের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ধাপ ৪ — দানের প্রকৃত পদ্ধতি
- PBSC (Peripheral Blood Stem Cell) অ্যাফেরেসিস: ৪–৬ ঘণ্টার আউটপেশেন্ট প্রসিডিউর। দানের আগে সাধারণত ৫ দিন G-CSF/Filgrastim ইনজেকশন দেওয়া হয়, যাতে মজ্জা থেকে স্টেম সেলগুলো রক্তে বেশি আসে। রক্ত একটি মেশিনে দিয়ে স্টেমসেল আলাদা করা হয় এবং বাকি রক্ত ফিরে দেওয়া হয়। এটি প্লেটলেট দানের মতো নিরাপদ প্রক্রিয়া; সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা যায় না। nmdp.org+2dkms.org+2
ধাপ ৫ — রিকভারি ও ফলোআপ
- G-CSF-এর সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা) হতে পারে; বেশিরভাগ মানুষ কয়েক দিন-হপ্তার মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। ট্রান্সপ্লান্ট সফল হলে রেসিপিয়েন্ট-এর জীবন পরিবর্তিত হতে পারে।
DKMS সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত
DKMS (জার্মান বোন মেরো ডোনার সেন্টার) 1990-এর দশকে শুরু; 2024-এ তাদের গ্লোবাল রেজিস্ট্রিতে ~12.5 মিলিয়ন নাম ছিল। DKMS-এর মতো সংস্থার মাধ্যমে বহু মানুষ ডোনার হিসেবে নাম লিখিয়ে, ম্যাচ মিলে জীবন বাঁচিয়েছে। ভারতেও DKMS-এর কার্যক্রম রয়েছে এবং রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অনলাইনে সহজ। dkms.org+1
প্রাইভেসি, বয়স ও যোগ্যতা
- সাধারণত বয়স 18–55 (কিছু রেজিস্ট্রি 60 পর্যন্ত নেন) । ওজন ও সাধারণ স্বাস্থ্য ভালো হলে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। গালে সোয়াব কিট পূরণ করা সম্পূর্ণ ফ্রি। নির্দিষ্ট নিয়ম ও বয়সের বিবরণ DKMS/স্থানীয় রেজিস্ট্রির নীতিবলে দেখুন। dkms-india.org
FAQs
Q1: স্টেম সেল ডোনেট করলে আমার শরীর দুর্বল হয়ে যাবে কি?
না — PBSC পদ্ধতিতে আপনার রক্ত থেকে স্টেম সেল আলাদা করা হয় এবং বাকি রক্ত ফিরে দেওয়া হয়; দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি সাধারণত হয় না। nmdp.org+1
Q2: গালের সোয়াব কিট কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, কিটে শুধুই একটি DNA-নমুনা নেওয়া হয় — এটি HLA-টাইপিং-এর জন্য। কোনো ইনভেসিভ পদ্ধতি না। dkms.org
Q3: আমার প্রোফাইল দেখা যাবে?
প্রোফাইল নিরাপদভাবে রেজিস্ট্রি-ডেটাবেসে রাখা হয়; কেবল-মাত্র যখন অ্যাপ্লিকেবল ম্যাচ পাওয়া যায় তখনই রেজিস্ট্রি-টিম আপনাকে যোগাযোগ করবে।
কল-টু-অ্যাকশন
আজই রেজিস্টার করুন — একটি ছোট কাজ, কিন্তু এককভাবে কারও জীবন বদলে দিতে পারে। DKMS বা আপনার নিকটস্থ বিশ্বস্ত রেজিস্ট্রির ওয়েবসাইটে গিয়ে ফ্রি সোয়াব কিটের জন্য আবেদন করুন। DKMS-লিংক আছে সেটি এখানে dkms-india.org


